কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (পাঠ ৫)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রাত্যহিক জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | - | NCTB BOOK
79
79

তোমরা নিশ্চয়ই জানো বাংলাদেশ এখন বিশাল বিশাল জাহাজ তৈরি করে পৃথিবীর বড় বড় দেশে রপ্তানি করে। আমাদের এত সুন্দর দেশটির ভেতর দিয়ে বিশাল বিশাল নদী গিয়েছে- এই দেশের মানুষ নদী-বিল-সমুদ্রে বড় হয়েছে- কাজেই তারা যে চমৎকার নৌকা আর জাহাজ বানাতে পারবে তাতে অবাক হবার কী আছে?

বড় বড় জাহাজ বানাতে হলে বিশাল বিশাল ধাতব টুকরোকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে তারপর ওয়েল্ডিং করতে হয়। তোমরা নিশ্চয়ই পথে-ঘাটে দোকানে ওয়েল্ডিং করতে দেখেছ। সেখান থেকে যে তীব্র আলো বের হয় কেউ যদি সোজাসুজি সেদিকে তাকায় তাহলে তার চোখ পাকাপাকিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। যারা ওয়েল্ডিং করে তাদের বিশেষ চশমা পরে কাজ করতে হয়। সেখানে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয়, ধাতব টুকরো ছিটকে ছিটকে পড়ে। কাজটি দেখেই মনে হয় এটি বেশ বিপজ্জনক কাজ। এই বিপজ্জনক কাজটি যদি মানুষকে করতে না হতো, কোনো একটা রোবট করত- তাহলে কেমন হতো?

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট দিয়ে আজকাল বিপজ্জনক যান্ত্রিক কাজ করা হয়

তোমরা শুনে খুশি হবে- এ ধরনের বিপজ্জনক কাজগুলো আসলেই আস্তে আস্তে মানুষ নিজে না করে রোবটদের দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছে। মানুষেরা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়- একঘেয়ে কাজ হলে কাজ করতে ইচ্ছেও করে না। রোবটরা ক্লান্ত হয় না। একঘেয়ে কাজটি নিয়ে তারা কখনো অভিযোগও করে না। তাই পৃথিবীর বড় বড় কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে আর মানুষ নেই। কাজ করে রোবটরা। মানুষেরা বড়জোর দেখে কাজটা ঠিক মতো হচ্ছে কি না।

ড্রাইভার ছাড়াই এই গাড়ি চালানো যায়

একঘেয়ে বিপজ্জনক কাজগুলো মানুষ থেকে রোবটেরা অনেক ভালোভাবে করতে পারে। কাজেই যত দিন যাচ্ছে ততই এই কাজগুলো মানুষের বদলে মেশিনেরা করছে- তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

আমাদের পথে-ঘাটে প্রতিদিন কত একসিডেন্ট হয়- মোটামুটি অনুমান করা যায় আর কয়েক দশক পর একসিডেন্ট কমে আসবে কারণ তখন গাড়ি আর মানুষেরা চালাবে না। গাড়ি চালাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা যন্ত্র। গাড়ির বেলায় সেটা শুরু হতে একটু দেরি হচ্ছে- আকাশ পথে সেটা কিন্তু এর মাঝে শুরু হয়ে গেছে। বিশাল বিশাল প্লেন যখন আকাশে উড়ে তখন পাইলটদের কিছু করতে হয় না-কম্পিউটারই সবকিছু করে। যুদ্ধবিমানে আজকাল পাইলট থাকেই না, পাইলটবিহীন ড্রোনগুলো যে প্রতিদিন ছবি তুলছে এবং ভিডিও করছে তা আমরা সবাই জানি।

একটি ক্যামেরা ড্রোন

আমাদের কাজের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি কেমন করে ব্যবহার হয় তার তালিকা করতে গেলে সেটি শেষ হবে বলে মনে হয় না। দাপ্তরিক চিঠিপত্র যোগাযোগের কথা তো আগেই বলা হয়েছে-অফিসের মিটিংগুলোও আজকাল অন্যভাবে হয়। বিভিন্ন অফিসের বিভিন্ন মানুষ আলাদাভাবে বসে একসাথে কনফারেন্স করে। আমাদের দেশেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-ক্লাসরুম তৈরি হচ্ছে, একজন শিক্ষক তার ক্লাসরুমে পড়াবেন, সারা দেশের অসংখ্য মানুষ তার কাছে পড়বে। অফিস ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। আগে অফিসে বড় বড় ফাইল এক রুম থেকে অন্য রুমে যেতে দিন পার হয়ে যেত-নতুন ইলেকট্রনিক ফাইল চোখের পলকে এক অফিস থেকে অন্য অফিস চলে যায়।

দলগত কাজ
রোবট দিয়ে করাতে চাও এমন কতগুলো কাজের তালিকা তৈরি করো।

অফিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হয় টাকাপয়সা বা একাউন্টিং সংক্রান্ত, তথ্য প্রযুক্তির কারণে সেই কাজগুলো এখন সহজ হয়েছে বড় বড় লেজার খাতায় মাথা গুঁজে কিছু লিখতে হয় না, কম্পিউটার মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু করে ফেলে।

মানুষের কাজের জায়গায় সব সময়ই কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে হয়, বোঝাতে হয়, আলোচনা করতে হয়। এসব কাজের জন্য এত চমৎকার ব্যবস্থা বের হয়েছে, এত সুন্দর করে সবকিছু করে ফেলা যায় যে মাঝে মাঝে মনে হয় আগে এই কাজগুলো কেমন করে করা হতো?

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion